চীনের আমদানি ও রপ্তানি মেলা সাধারণত ক্যান্টন ফেয়ার নামে পরিচিত। বিশ্ব বানিজ্য ক্যালেন্ডারে সবচেয়ে বড় ইভেন্টের মধ্যে এটি একটি। গুয়াংজু শহরে ১৯৫৭ সাল থেকে এ মেলার প্রচলন শুরু হয়। তখন থেকেই মেলাটি সমস্ত শিল্প আমদানি এবং রপ্তানি উভয়ের জন্য বিশাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি হতে থাকে। প্রতিবছর বসন্ত ও শরৎ এই দুই ঋতুতে দুইবার বিশ্ব বাণিজ্যের এ বৃহত্তর মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ব্যাপক আয়োজনে চীনের গুয়াংজু শহরে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ১৩৭ তম ক্যান্টন ফেয়ার-২০২৫ (বসন্ত পর্ব)। ১৫ এপ্রিল থেকে মে মাসের ৫ তারিখ পর্যন্ত বিশ্বের অন্যতম এবং বিখ্যাত এ বাণিজ্য মেলা তিনটি ধাপে ৫ দিন করে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম পর্ব ১৫ এপ্রিল থেকে ১৯ এপ্রিল, দ্বিতীয় পর্ব ২৩ থেকে ২৭ এপ্রিল এবং তৃতীয় পর্ব ছিল ১ মে থেকে ৫ মে পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে। অন্যদিকে আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ক্যান্টন ফেয়ার (শরৎ পর্ব) অনুষ্ঠিত হবে। ক্যান্টন ফেয়ার বা চায়না আমদানি ও রপ্তানি মেলা হংকংয়ের কাছে দক্ষিণ চীনে অবস্থিত গুয়াংজু শহরে হয়ে থাকে। ক্যান্টন ফেয়ারের “ক্যান্টন” শব্দটি চীনের গুয়াংজু শহরের আরেকটি নাম। তাই চীনের বিখ্যাত এই বাণিজ্য মেলা সকলের কাছে ক্যান্টন ফেয়ার নামে পরিচিত। এটি চীনের প্রাচীনতম বৃহত্তম এবং সবচেয়ে প্রতিনিধিত্বশীল বাণিজ্য মেলা। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং গুয়াংজু প্রদেশের প্রাদেশিক সরকারের যৌথ আয়োজনে এবং চায়না ফরেন ট্রেড সেন্টার দ্বারা এ ক্যান্টন ফেয়ার পরিচালিত হয়ে থাকে। এ মেলার মাধ্যমে চীনের বিভিন্ন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান তাদের নিত্য নতুন পণ্যের সাথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মেলবন্ধনের এক বিশাল প্ল্যাটফর্ম তৈরী করেছে। এখানে আলাদা আলাদা ৪ টি ব্লকে প্রদর্শিত হয়েছে তাদের হাজার হাজার পণ্যের সমাহার। আর এখান থেকেই দেখে শুনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা সোর্সিং করে তাদের পছন্দের পণ্য। এর ফলে চীনের কোম্পানিগুলোকে আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণে ব্যাপকভাবে সহায়তা করছে। ক্যান্টন ফেয়ারের মিডিয়া সেন্টারের মাধ্যমে জানাযায়,গত ২ বছরে ২৫০০ টির বেশী কোম্পানি থেকে প্রায় ৫ হাজার পণ্য প্রদর্শিত হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ৩০০ টি পণ্যের নকশা ছিল অসাধারণ।
এবারের উল্লেখযোগ্য পণ্যগুলোর মধ্যে একটি হল কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালিত দাবা রোবট, বাদ্যযন্ত্র বাজাতে এবং লেখার ক্ষমতা সম্পন্ন স্মার্ট বায়োনিক হাত, স্বয়ংক্রিয়ভাবে দেয়াল পরিস্কার করতে পারা পরিষ্কারক রোবট, সেইসাথে স্মার্ট ডিভাইসের পাশাপাশি ব্যবহারিক পণ্যগুলোও ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এটি সম্ভবত বিশ্বের বৃহত্তম কনভেনশন সেন্টার, যার আয়তন ১২১৭৪০০০ বর্গফুট বা ১১৩১০০০ বর্গ মিটার। এই বিশাল এলাকা জুড়ে মেলায় নানা পণ্য সামগ্রী নিয়ে প্রদর্শিত বুথে সংখ্যা ছিল এবার ৬০ হাজারেরও বেশি।
মেলায় কথা হয় বাংলাদেশ থেকে আসা কয়েকজন শিল্প উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীর সাথে। এস এ ফেব্রিক্স এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাজী মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, সঠিকভাবে সোর্সিং করতে পারলে চীনের সাথে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যের একটা ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। চায়না বাংলা বিজনেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: মাহাবুবুর রহমান জানান, দিনদিন ক্যান্টন ফেয়ারের প্রতি আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বেড়েই চলেছে। এখান থেকে তারা কাঙ্ক্ষিত পণ্য সোর্সিং করে তাদের ব্যবসাকে আরো সমৃদ্ধ করে তুলছেন।
মিরপুরের মোবাইল এক্সেসরিজ ব্যবসায়ী মাসুদুর রহমান জানান, নিত্য নতুন মোবাইল এক্সেসরিজ এর জন্য চায়না পণ্যের প্রশংসা করতেই হয়। আমাদের বাংলাদেশে এখন এসব পণ্যের এক বিশাল বাজার গড়ে উঠেছে। উত্তরার তরুণ পোশাক ব্যবসায়ী হাদীকুল ইসলাম ফারদিন বলেন, প্রথম বারের মত চীনের ক্যান্টন ফেয়ারে এসে বেশ ভালো লাগেছে। আমার মনে হয় চায়নার সাথে পোশাকসহ অন্যান্য পণ্য সামগ্রীর যে বাজার রয়েছে এতে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যবসায়ীদের জন্য চীন উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হতে পারে। একই সাথে চেষ্টা করলে তরুণরাও তাদের ব্যবসা ক্ষেত্রে ভিন্নমাত্রাসহ নতুন দ্বার উন্মোচন করতে পারেন।
আয়োজকদের তথ্য মতে এবারের মেলায় অংশগ্রহণকারী বিদেশী ক্রেতার সংখ্যা এবং স্থানীয়ভাবে রপ্তানি লেনদেনের মত অনেক সূচক নতুন ঐতিহাসিক রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। ২১৯ টি দেশের মোট ২ লাখ ৮০ হাজার ৯ শত বিদেশী ক্রেতা মেলায় অংশগ্রহণ করেন। স্থানীয়ভাবে রপ্তানি লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৫৪৪ কোটি মার্কিন ডলার, যা গত বছরের মেলার তুলনায় তিন শতাংশ বেশি। উদীয়মান বাজারগুলো এখনও ক্যান্টন ফেয়ারের সবচেযে বড় গ্রাহক উৎসব।