কালিয়াকৈর(গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ-গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকায় একটি কারখানার অনিয়ম ও সেচ্ছাচারিতার বিভিন্ন বিষয়ে ফেসবুকে পোষ্ট দিয়ে বিষাক্ত ক্যামিকেল খেয়ে কারখানার এক শ্রমিক আত্নহত্যা করেছে। থানা পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকায় একটি পোষাক তৈরি কারখানায়। ওই ঘটনার পর কারখানা ছুটি ঘোষনা করা হয়েছে।
নিহত হলেন,নীলফামারী জেলার সদর থানার নিত্যনন্দি এলাকার আব্দুল আওয়ালের ছেলে মো. ইদ্রিস আলী (১৯)। তিনি উপজেলার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় রমিজের বাড়ীতে সপরিবারে বাসা ভাড়া থেকে কারখানার কার্টুন সেকশনে কাজ করতেন।
মৃত্যুর আগে ওই শ্রমিক কারখানা কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়ম নিয়ে একটি ফেসবুকে স্টাটাস দেন। অগোছালো ভাষায় সেখানে তিনি লিখেন, ‘মন্ডল গ্রুপের মন্টিন্স লিমিটেড এখানে এক বছর যাবত চাকরি করি। কিছু লোক আসার তিন মাস এবং ছয় মাস হচ্ছে তাদেরকে পার্মান (পার্মানেন্ট) করে। আমাকে করেনা কারণ হচ্ছে আমরা মেশিনের লোক। একদিন ছয়টায় গিয়েছিলাম তার জন্য আমাদেরকে বিচার করছি আমি কি অপরাধ করছি। তাদের জন্য আমার জীবন আমি শেষ করে দেব। এর জন্য দাবি (দায়ী) আমাদের সেকশনের প্ল্যানিং কামরুল স্যার আর হচ্ছে ম্যানেজার হারুন স্যার ওরা মানুষকে মানুষ মনে করে না। তারা মনে করে ওরা সোনার তৈরি, আমরা মাটির তৈরি। আমি আজকে সুইসাইড করব। ঈদের নিয়মে আমি অনেক কষ্ট পাইছি এই পৃথিবীর মানুষ বড়ই নিষ্ঠুর আপনারা এর বিচার করবেন এই পৃথিবীর মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী।’
কারখানা বেশ কয়েকজন শ্রমিক জানান, ইদ্রিস আলী তার পরিবার নিয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় ভাড়া থেকে মন্ট্রিমস্ লিমিটেড কারখানায় কাজ করতেন। চাকরির এক বছর হয়ে গেলেও তাকে এখনও স্থায়ী করা হয়নি। স্থায়ী করার বিষয়ে তিনি যখনই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে গেছেন তখনই তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে। এছাড়া তিনি নানা বিষয়ে বেশ কিছুদিন ধরে হতাশার মধ্যে ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতের কোনো এক সময়ে ইদ্রিস আলী কারখানার ক্যামিকেল খায়। পরে তাকে মুমুর্ষ আবস্থায় উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। তারা আরও জানান হারুন ও কামরু ম্যানেজেন্টে যোগ দেয়ার পর থেকে শ্রমিকদের উপর অত্যাচার করছে। তারা মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে। কথায় কথায় চাকরি হতে ছাঁটাই করে। তাদের চাকরিচ্যুত অবলম্বে করতে হবে। না হল আরও শ্রমিক মারা যাবে।
নিহত শ্রমিকের স্ত্রী হাসি আক্তার বলেন, আমার স্বামী মারা গেছে । এর বেশি কিছু আমি বলতে পারবো না।
মন্ট্রিমস্ লিমিট কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, কারখানার একজন শ্রমিক বিষ জাতীয় কিছু খেয়ে আত্নহত্যা করেছে।
গাজীপুর জেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ হোসেন যুবরাজ ঘটনার সত্যতা যাচাই ও শ্রমিক নির্যাতনের সঠিক বিচারের দাবী জানিয়েছেন।
কালিয়াকৈর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. যোবায়ের বলেন, কারখানার এক শ্রমিক কারখানার ভিতরের গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে বিষাক্ত কিছু খেয়ে আত্নহত্যা করেছে। তার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।