মোহাম্মদ আদনান মামুন, গাজীপুর-
গাজীপুরের শ্রীপুরে তিন নদীর মোহনায় উঁচু প্রাচীর নির্মাণ করে সুতিয়া নদীর বিরাট অংশ দখলের কবলে পড়েছে। নদীর চরে চলছে উঁচু সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কর্মযজ্ঞ। এতে করে মারাত্মক দখলের কবলে পড়ছে স্বচ্ছ জলের নদী সুতিয়া। একই সঙ্গে হুমকিতে ব্রহ্মপুত্র আর শীতলক্ষ্যা। স্থানীয় প্রশাসন ও নদী রক্ষা সংশ্লিষ্টদের বৃত্তাঙ্গুল দেখিয়ে নদী চর জবরদখলের হিড়িক চালাচ্ছে এক প্রভাবশালী। স্থানীয় এক প্রভাবশালী মাদ্রাসার সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে নদীর চরে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করছে। প্রভাবশালীর ভয়ে প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি স্থানীয়রা। নদীর মোহনায় উঁচু প্রাচীরে প্রতিবন্ধকতা তৈরির ফলে নদী ভাঙনের শঙ্কা করছেন জনপদের বাসিন্দারা।
সরেজমিনে খোঁজ খবর নিয়ে দেখাযায়, উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের নান্দিয়া সাঙ্গুন গ্রামে ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষ্যা এবং সুতিয়া এই তিনটি নদী মিলিত হয়েছে। সুতিয়া নদীটি নান্দিয়া সাঙ্গুন গ্রাম ঘেঁষে বয়ে গেছে। ঠিক তিন নদীর মোহনায় সুতিয়া শুরুতেই উঁচু সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে জবরদখলে নিয়েছে। ইতিমধ্যে নদীর বিরাট অংশ দখলে নিয়ে সীমানা প্রাচীরের এক অংশের কাজ শেষ করেছে। অপর অংশের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। নদীর অনেক অংশ ইতিমধ্যে দখলে নিয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালী ওয়াহিদুর রহমান নামের এক ব্যক্তি মাদ্রাসার সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে নদীর চর দখল করে নিয়েছে। বর্ষার শুরুতেই যেখানে থৈথৈ পানি সেখানে হচ্ছে সীমানা প্রাচীর। স্থানীয়রা জানিয়েছেন সীমানা প্রাচীরের ভেতর কমপক্ষে এক বিঘা জমি জবরদখলে নিয়েছে। যা সম্পুর্ন নদীর জায়গা।
স্থানীয় বাসিন্দা মনিরুজ্জামান বলেন, যেখানে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে সেটি সম্পুর্ন নদীর জায়গা। এক সময় এখানেই নদী ছিলো। কয়েকবছর যাবৎ এখানে চর জাগে। এখনও বর্ষার শুরুতেই থৈথৈ পানি থাকে। অনেক স্রোত বহমান এই জায়গা দিয়ে। এখানে সীমানা প্রাচীর দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরির কারণে নদী ভাঙন শুরুর আশংকা রয়েছে। এমন একটি জায়গায় সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে যেখানে তিনটি নদীর পানি প্রবাহিত হয়। বর্ষাকালে অনেক বেশি স্রোত থাকে।
নান্দিয়া সাঙ্গুন গ্রামের বাসিন্দা মজিবুর রহমান বলেন, যিনি নদীর জমি জবরদখল করছেন তিনি তো সমাজের একজন কর্তা ব্যক্তি। ওনি কি করে এমনটি করতে পারেন। এখানে তো কয়েক বছর আগেও নদী ছিলো। কয়েক বছর হলো চর জাগছে। আবার হয়তোবা নদী হবে। মোহনার কাছে নদী একটি স্টেডিয়ামের মতো বড়। আজ দখল হতে হতে এতটুকু। আজ সেটুকু আমরা দখল করছি। তাও আবার উঁচু সীমানা নির্মাণ করে।
অভিযুক্ত ওয়াহিদুল রহমান বলেন, আমার নিজস্ব জমিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করছি। এখানে কিছু অংশ থাকতে পারে নদীর। তবে মাপজোখ করা হয়নি। আপনি তো নদীর বিরাট অংশ দখলে নিয়েছেন? যেটা দৃশ্যমান নদী? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন এখন নদী নেই।
নদী পরিব্রাজক দল শ্রীপুর শাখার সভাপতি সাঈদ চৌধুরী বলেন, এটা একটি বড় দখল। এমন দৃশ্যমান দখলের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আশাকরি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ দ্রুত সময়ের মধ্যে সীমানা প্রাচীর অপসারণের উদ্যোগ নিবেন। নদীর জমি বা নদীর চর জবরদখলের কোন সুযোগ নেই। এটি জন সম্পতি। রাষ্ট্র নদী রক্ষায় বদ্ধপরিকর।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও সজীব আহমেদ বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা নেই। দ্রুত সময়ের মধ্যে সরেজমিনে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। একই সঙ্গে জবরদখলের সঙ্গে জরিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।